স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপে এমন থ্রিলার ম্যাচ কি কখনো দেখেছে বিশ্ব? ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো, বলে বলে দৃশ্যপটের পরিবর্তন, ক্লাইম্যাক্স-অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্সÑ উত্তেজনার কোন মসলা ছিল না গতকালের বিশ্বকাপের ফাইনালে! কী জানি হয়! কী জানি হয়! টান-টান স্লায়ুক্ষয়ী রোমাঞ্চকর এক ফাইনাল উপহার দিয়েছে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের অতীতের সব ফাইনালকে মিথ্যা প্রমাণ করে ইতিহাসের সেরা উপভোগ্য একটি ম্যাচ উপহার দিল দল দুটি। লর্ডসে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই শেষে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার গৌরব অর্জন করল ইংলিশরা। ফাইনালে বড় স্কোর হয়নি। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪১ রানের পুঁজি পায় নিউজল্যান্ড। সবাই হয়তো ধরেই নিয়েছিলেনÑ গত আসরের মতো এবারও পানসে ফাইনাল হতে যাচ্ছে; কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রোমাঞ্চ ছড়াতে থাকে ম্যাচ। দলীয় ৮৬ রানে ৪ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। জস বাটলারের সঙ্গে বড় জুটি গড়ে তুলছিলেন স্টোকস। এ জুটি ভাঙার পর ম্যাচ জমে ওঠে। মার্টিন গাপটিল সর্বনাশা ওভার থ্রো করে করে নাটকীয়তার জন্ম দেন। ২ রানের জায়গায় আরও ৪ রান ফ্রি পেয়ে ইংল্যান্ড শিরোপার কাছে অনেকটা চলে যায়। পেছন থেকে আবার টেনে ধরে নিউজিল্যান্ড। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ম্যাচ টাই হয়! এর পর ম্যাচ চলে যায় সুপার ওভারে। সুপার ওভারেও শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই জমে ওঠে। ইংল্যান্ড ১৫ রান তোলে। নিউজিল্যান্ডও করল ঠিক ১৫! সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই হয়! এর পর হিসাব করে দেখা হলো, বাউন্ডারি বেশি কাদের। তাতেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় ইংল্যান্ড! বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনাল দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। এর আগে ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে ৯২ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উইন্ডিজরা। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৩ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ভারত। তবে ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল জমে উঠেছিল। ইংল্যান্ডকে ৭ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালও জমে ওঠেছিল। সেবার ইংল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় পাকিস্তান। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারায় শ্রীলংকা। এর পর ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে দাপুটে ক্রিকেট খেলে শিরোপা জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলংকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। গত বিশ্বকাপের ফাইনালও জমেনি। নিউজিল্যান্ডকেই ৭ উইকেটে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। গত ১১ বিশ্বকাপের ফাইনালের চেয়ে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, জমজমাট ও নানা নাটকীয়কতাভরা এক উপভোগ্য রোমাঞ্চকর ফাইনাল হয়েছে। এবারই প্রথম সুপার ওভারে ফাইনালের ম্যাচ নিষ্পত্তি হলো।